en

সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদসমূহ ও অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত ভাগ

সংবিধান একটি দেশের প্রধান দলিল যার উপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানও একই ভাবে দেশ পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নানা চড়াই উতরাই এবং বেশ কয়েকটি সংশোধনীর পর বাংলাদেশ সংবিধানের এই অবস্থায় আসা। আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং পড়াশোনায় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদসমূহ জেনে রাখা দরকার পড়ে। বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদসমূহ জানা থাকলে আইনি শর্ত পূরণ করে কাজ সম্পন্ন করা যায় যাতে করে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই সকল অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে। সর্বোপরি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ সংবিধানের এই সকল অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জানা দায়িত্বের মধ্যেই পরে।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অনুচ্ছেদসমুহ আবার বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।

প্রজাতন্ত্রঃ বাংলাদেশ সংবিধানের ১-৭ তম অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পরিচিতি, প্রজাতন্ত্রের সীমানা, রাষ্ট্রধর্ম, রাষ্ট্রভাষা, জাতীয় সঙ্গিত প্রতিক ও পতাকা, রাজধানী, নাগরিকত্ব এবং প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন উল্লেখ করা আছে।

রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিসমূহঃ বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ তথা ৮-২৫ তম অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পরিচালনার মূলনীতিসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ, মালকানা নীতি, কৃষক ও শ্রমিক মুক্তি, মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য রুপে কর্ম, নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য, নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, জাতীয় সংস্কৃতি, উপজাতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, জাতীয় স্মৃতি নিদর্শন প্রভৃতি এবং আন্তর্জাতিক শান্তি নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন।

মৌলিক নাগরিক অধিকারসমূহঃ সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬-৪৭ তম অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মানবাধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইন বাতিল, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মীয় কারনে বৈষম্য, সরকারি নিয়োগ লাভের সুযোগের সমতা, বিদেশী খেতাব গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্য ক্তি স্বাধীনতার অধিকার, গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবজ, জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ, বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বাক স্বাধীনতা, পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ, মৌলিক অধিকার বল বত করণ, শৃঙ্খলামুক্ত আইনের ক্ষেত্রে অধিকার পরিবর্তন, দায়মুক্তি বিধানের ক্ষমতা এবং কতিপয় আইনের হেফাজতের কথা বলা হয়েছে।

নির্বাহী বিভাগঃ বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ ভাগ তথা ৪৮-৬৪ তম অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদ(প্রথম পরিচ্ছদ), প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা(দ্বিতীয় পরিচ্ছদ), স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা(তৃতীয় পরিচ্ছদ), প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ ও যুদ্ধ(চতুর্থ পরিচ্ছদ) এবং এটর্নি জেনারেল(পঞ্চম পরিচ্ছদ) -এর কথা বলা হয়েছে।

আইনসভাঃ বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম ভাগের ৬৫-৯৩ তম অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ সংসদ(প্রথম পরিচ্ছদ), আইন প্রণয়ন ও অর্থ সংক্রান্ত পদ্ধতি(দ্বিতীয় পরিচ্ছদ) এবং অধ্যাদেশ প্রনয়ন ক্ষমতা(তৃতীয় পরিচ্ছদ) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে নিম্নলিখিত বিসয়সমুহ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- সংসদ প্রতিষ্ঠা, সংসদে নির্বাচিত হবার যোগ্যতা, সংসদের আসন শূন্য হওয়া, সংসদ সদস্যদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ, শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত নীতিমালা, আইন প্রণয়ন পদ্ধতি, অর্থ বিল, অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতা, সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও বাণী, মন্ত্রীগণের অধিকার, কার্যপ্রণালী এবং সংসদ সচিবালয় ইত্যাদি।

বিচার বিভাগঃ বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৪-১১৭ তম অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্ট, বিচারক নিয়োগ ও মেয়াদ, প্রধান বিচারপতি, হাই কোর্ট, আদালতসমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

নির্বাচনঃ সংবিধানের সপ্তম ভাগে ১১৮-১২৬ তম অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশনের দ্বায়িত্ব, কর্মচারীগণ, নির্বাচনের সময়কাল, নির্বাচনী আইন এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

মহা হিসাব নিরিক্ষক ও নিয়ন্ত্রকঃ সংবিধানের অষ্টম ভাগের ১২৭-১৩২ তম অনুচ্ছেদে মহা হিসাব নিরীক্ষক পদের প্রতিষ্ঠা, মহা হিসাব নিরীক্ষকের কাজ, মেয়াদ, প্রজাতন্ত্রের হিসাব রক্ষার আকার ও প্রকৃতি এবং মহা হিসাব নিরীক্ষকের হিসাব উপস্থাপন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের কর্ম বিভাগঃ নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি, কর্মের মেয়াদ, সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত, কর্ম বিভাগ পুনর্গঠন এবং জরুরী বিধানাবলি নিয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের নবম ভাগে ১৩৩-১৪১ তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনঃ বাংলাদেশ সংবিধানের দশম ভাগের ১৪২ অনুচ্ছেদে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে।

বিবিধঃ একাদশ এবং সর্বশেষ ভাগে ১৪৩-১৫৩ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি, চুক্তি ও দলিল, বাংলাদেশের নামে মামলা, বিভিন্ন পদের শপথ, প্রচলিত আইনের হেফাজত, রহিতকরন এবং ব্যাখ্যা সংক্রান্ত বিধানাবলির উল্লেখ আছে।


আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো