en

মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলের ইতিহাস এবং পশ্চিমা রাজনীতি

মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বের উপর পশ্চিমা আগ্রাসনের কথা সবারই জানা আছে। পৃথিবীতে পরাশক্তি গুলো নিজেদের ক্ষমতার ব্যপ্তি দীর্ঘস্থায়ীকরণ এবং শক্তি ও সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষে সবসময়ই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে তার ফলও খুব ভাল হয়নি। কথায় আছে না "পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যে জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন"।মধ্যপ্রাচ্যের উপর সবচেয়ে বড় আগ্রাসন চালানো হয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইল এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফুর ১৯১৭ সালের এক ঘোষণাবলে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত ইহুদীদের নিয়ে ফিলিস্থিন ভূখণ্ডে পৃথিবীর একমাত্র স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ যেন ছিল সাপের বাসায় বেঁজির বাস।

মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে মুসলমানদের সূতিকাগার তা জানা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেয়ার উদ্দেশ্য সংঘাত সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। তখন আরব বিশ্ব থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পশ্চিমাদের বিজয় এবং মুসলমানদের দুর্বল অবস্থার কারনে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয়নি।

এরপর শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে পশ্চিমাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ। প্রতি বছর ইসরাইলকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেয়া এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যার ফলে ইসরাইল অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর মধ্যে এক অন্যতম সামরিক এবং অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভাব করে। এর প্রমান পাওয়া যায় আরব বিশ্বের সাথে পরপর কয়েকটি যুদ্ধে একক ইসরাইলের জয়ের মধ্য দিয়ে।

এরপর শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্য তথা সারা বিশ্বে ইসরাইলের আধিপত্য বিস্তার। মধ্যপ্রাচ্য সহ সারা পৃথিবীতে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। বর্তমানে অস্ত্র রপ্তানিতে বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করেছে ইসরাইল। এখন গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গুঞ্জনও শুনা যাচ্ছে। তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়া হয়নি।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এক সময়ের পরাশ্রিত ইসরাইল এখন দখলদারে পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর ইসরাইল গড়ার লক্ষে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘাত বাধাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে যে কতবার মানচিত্রের বদল হয়েছে তার হিসেব নেই। ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া এবং ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে এবং গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে।

২০০৩ সালের ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ফলশ্রুতিতে জন্ম হয়েছে আইএস-এর মত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। এ যেন বিশ্ববাসীকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। এসব কিছুই করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার একক আধিপত্য বজায় রাখা এবং ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার্থে।

কিন্তু ফলাফল হয়েছে ভিন্ন, সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া গৃহযুদ্ধের পর ইউরোপে মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্রোত সামাল দিতে না পারা এবং এই বিষয়ে পারস্পারিক মত বিরোধের কারনে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতিক জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়া, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোও আজ হুমকির সম্মুখীন।

সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে জাতিসঙ্গে ইসরাইল বিরোধী বিল পাশ হওয়াকে কেন্দ্র করে জাতিসঙ্গ থেকে ইউএসের চলে যাওয়ার ঘোষণা সব মিলিয়ে তাদের অবস্থা বোঝাই যাচ্ছে। সর্বোপরি, বিশ্বব্যাপি নির্যাতিত নিষ্পেষিত এবং সচেতন মানুষের মধ্যে পুঁজিবাদ বিরোধী গণজোয়ার কিভাবে সামাল দিবে পশ্চিমা বিশ্ব?

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো