en

হতাশা কি এবং হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

হতাশা শব্দটির ইংরেজি "Frustration"। কোন লক্ষ অর্জন করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হওয়ার ফলে যে স্থবির অবস্থা দেখা দেয় তাকে হতাশা বলে। মানুষের জীবনে হতাশা আসলে কাজ করার ইচ্ছা শক্তি হাড়িয়ে ফেলে। হতাশার বিশিষ্টসমূহঃ হতাশার কতিপয় বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়-
১. হতাশায় ব্যক্তির ব্যর্থতা তার উদ্যোগকে নিয়ন্ত্রন করে।
২. ব্যক্তির তার নিজের দ্বারা কিছু হবেনা বলে মনে করতে থাকে।
৩. কোন লক্ষ অর্জনের গুরুত্ব এবং লক্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে উপস্থিত বাধা হতাশার মাত্রা নির্ধারণ করে।
৪. ব্যক্তি নিজে এবং যেই পরিবেশে সে বসবাস করে উভয়ই হতাশা সৃষ্টি হওয়ার জন্য দায়ী।

হতাশার কারন সমূহ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলতে গিয়ে অনেক কারনে হতাশার সম্মুখীন হয়। যেমনঃ

ক. পরিস্থিতিমূলক উৎসঃ যখন পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য কোন ধরণের হতাশার সৃষ্টি হয় তাকে পরিস্থিতিমূলক উৎস বলে। সাধারানত প্রাকৃতিক কারনেই এই ধরণের হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। প্রাকৃতিক কারন ছাড়াও রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক কারনেও এই ধরণের হতাশা আসতে পারে। ধরুন আপনি একটি অফিসে কোন কাজ করতে গেলেন কিন্তু বেশ কয়েক দিন যাওয়ার পরও কাজটি হচ্ছেনা ফলে আপনি হতাশ হয়ে যেতে পারেন। এই ধরণের হতাশার পেছনে ব্যক্তির কোন প্রভাব থাকে না।

খ. আন্তঃব্যক্তিক উৎসঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলতে গিয়ে অন্য মানুষের সাথে সম্পর্কের কারনেও হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। একজন অন্য জনের দ্বারা কিংবা কোন দলের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হয়ে কোন লক্ষ অর্জনে ব্যর্থ হলে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কগুলো আবার বিভিন্ন ধরণের হতে পারে-

১. একজনের সাথে অন্যজনের সম্পর্ক
২. পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে
৩. সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে
৪. জাতিগত বা ধর্মীয় মূল্যবোধের দ্বারা
৫. পেশাগত নিয়মকানুনের দ্বারা

গ. ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ উৎসঃ ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় যেমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকে বা অন্য কোন মানসিক কারনে হতাশা আসতে পারে। এধরনের বিষয় বাহ্যিক পরিবেশের সাথে খুব বেশি সংশ্লিষ্ট না। হতাশার অভ্যন্তরীণ কারনগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

১. শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেমন সে অত্যধিক লম্বা বা মোটা অথবা কালো বা সাদা ইত্যাদি কারনে অন্যদের তুলনায় নিজেকে ছোট মনে করতে পারে যা তার মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে।

২. মানসিকভাবে পিছিয়ে পরা যেমন একজন পরীক্ষায় বার বার অকৃতকার্য হলে যেখানে সহপাঠীরা সবাই পাশ করে চলে গেছে হতাশা সৃষ্টি করতে পারে।

৩. অনেক সময় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দন্দের মধ্যে পরে গিয়ে হতাশার সৃষ্টি কতে পারে।

৪. অতিমাত্রায় আদর্শবাদী হলেও হতাশা আসতে পারে। যেমন একজন কোন কারনে হয়তো ঘুষ নিলো কিন্তু তার আদর্শিক ভিত্তি এতো মজবুত যে সেই কাজের জন্য নিজে নিজে অনুতপ্ত হল এবং অনেক সময় হতাশার জন্ম দিতে পারে।

৫. অবাস্তব উচ্চাকাঙ্খা থাকলে লিক্ষ অর্জন করতে না পারলে হতাশা আসতে পারে। কেননা এই ধরণের উচ্চাকাঙ্খা নিজের জুজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।

৬. হীনমন্যতাবোধ ব্যক্তির মধ্যে হতাশার জন্ম দিতে পারে।

৭. যে ব্যক্তির মানসিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল থাকে সে সহজেই হতাশ হয়ে পরতে পারে।

হতাশা থেকে বাচার উপায়

হতাশা থেকে বাচার জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে এবং কিছু কাজ এড়িয়ে যেতে হবে। ভালো থাকার ইচ্ছাই মানুষকে ভালো রাখতে পারে তার সাথে অল্প কিছু কাজ। আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আত্মউন্নয়নই হতাশা দূর করার জন্য যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।

১. অবাস্তব প্রত্যাশা করা থেকে বিরত থাকুন
২. কাজের জন্য অহেতুক সময়সীমা করা উচিত নয়
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
৪. বন্ধুদের সাথে সময় কাটান
৫. বাস্তব অভিজ্ঞতা অফজন করুণ এবং স্বনির্ভরতা অর্জন করুণ
৬. রাগ দমন করার চেষ্টা করুণ
৭. সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুণ
৯. পরিবারের সাথে সময় কাটান
১০. নমনীয়তা অর্জন করুণ
১১. চাহিদার নিয়ন্ত্রণ করুণ
১২. আবেগ নয় বিবেককে প্রাধান্য দিন
১৩. সঠিক খাবার খান
১৪. মাদক থেকে বিরত থাকুন
১৫. দৈনিক জিবনাচারে পরিবর্তন আনুন
১৬. পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান
১৭. সাদাসিধা জীবনযাপন করুণ
১৮. আত্মদর্শন তৈরি করুণ

সর্বোপরি আমি একটি কথাই বলতে চাই যে পৃথিবীতে ব্যর্থতা এবং সফলতা বলতে কিছুই নেই এই চিন্তার নির্যাস যদি কেউ নিতে পারে তাহলে তাকে হতাশা কখনোই ধরতে পারবে না।

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো