en

যুদ্ধই জীবন যুদ্ধই সার্বজনীন হিটলারের এ উক্তির বাস্তব রূপ

যুদ্ধ সার্বজনীন এই কথার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছি প্রতিনিয়ত। এই যুদ্ধের যেন অন্ত নেই। আবহমান কাল ধরে চলাই এর ধর্ম। যুদ্ধ হয় দেশে দেশে, গোত্রে গোত্রে, ধর্মে ধর্মে, সাদা কালোয়। এসব যুদ্ধের শেষ আছে কিন্তু জীবন যুদ্ধের শেষ খুজে পাওয়া দুষ্কর।মুক্তির নেশায় মানুষ প্রতিনিয়ত হন্নেহারা। অন্যের ক্ষতি করতেও দ্বিধা বোধ করে না। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে নিচ্ছে নিজের মতো করে। এখানে পরের কথা ভাবার প্রশ্নই আসে না। এটাই যেন যুদ্ধের নীতি।

মানুষ যুদ্ধ করছে দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য, কেউবা মাথা গোজার একটা ঠাই খুজে ফিরে হন্নে হয়ে। তাদের মধ্যে কেউ সারাদিন যুদ্ধ করে থাকা – খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে আবার কেউবা পানি খেয়ে রাস্তার পাশে কোন এক জায়গায় মাথা গোজার ঠাই করে নেয়।

কিসের রোদ? কিসের বৃষ্টি? কিসের শীত? কিসেরই বা ধুলাবালি? এটাই সৈনিকের বৈশিষ্ট্য। আবার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যুদ্ধ যা খালি চোখে অনুধাবন করা খুবই দুষ্কর। এ যেন কোল্ড ওয়ার “ঠাণ্ডা যুদ্ধ”, নিজের সাথে নিজের চাওয়া পাওয়া, পরিবারের চাওয়া পাওয়া, সমাজের চাওয়া পাওয়া এবং না পাওয়ার।

পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে মুখে হাসির ফুল ঝরানোই হচ্ছে এই যুদ্ধের আলামত। আর ভিআইপিদেরতো যুদ্ধের শেষই নেই। নিজের চাহিদাগুলো পূরণ করা, ক্ষমতার পরিধি বিস্তৃত করা এবং প্রতিপক্ষকে গায়েল করার কাজে সদা ব্যস্ত থাকতে হয়। নতুন নতুন পরিকল্পনা কষতে হয়।

তাছাড়া, নিজের আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলা আর নিচু শ্রেণীর লোকদের নিয়ে তামাশা তো আছেই। জগতের সবাই এখন যুদ্ধের ময়দানে আছে। এখানে কেউ কারো মিত্র নয় সবাই সবার শত্রু। কারো দুঃখ কষ্টে কারো যায় আসে না। টিকে থাকাটাই মুখ্য বিষয়, বাকি সব গৌণ। আর নৈতিকতার তো প্রশ্নই আসে না।

কেননা যুদ্ধের ময়দানে সবই সঠিক। একটি নীতিকে সামনে রেখেই মানুষ মহাযুদ্ধের বীর সেনানীদের মতো ছোটে বেড়াচ্ছে দুর্বার গতিতে। “মুক্তিই লক্ষ, যুদ্ধই মুক্তি”। আর এই নীতিকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে বিদ্যার্জন এবং জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় সবার মনোযোগ চরমে।

সেই লক্ষ্যে পুঁথিগত বিদ্যার্জনে সবাই ব্যস্ত। নৈতিকতার শিক্ষাটা গৌণ বিষয়। কেননা নৈতিকতা জীবনে জয়ী হওয়ার যুদ্ধে বাধা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। তাই একে সামনে নিয়ে আসা অযথা বোঝা বাড়ানো বৈ কিছুনা। নৈতিকতা থাকলে রাস্তার পাশে দুই মাসের নবজাতককে দেখে না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব না।

এতে সময় এবং শ্রম উভয়ই নষ্ট হবে। নৈতিকতা থাকলে ক্ষুদার কষ্টে কান্নারত প্রতিবেশীর শিশু সন্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতে হবে। তার থেকে বরং আমিতো ভালোই আছি। অযথা অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে লাভ কি? মাঝে মাঝে মনের কোণে কিছু প্রশ্ন জাগে। আসলেই কি আমরা আমাদের নিয়ে ভালো আছি?

নিজের স্বার্থটাকে সিদ্ধ করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি হচ্ছে না তো? সময় কি সবসময় নিজের অনুকুলে থাকবে? মহাকাল কি তার সোনার তরীতে আমাদের চিরকাল বহন করে চলবে নাকি কোন এক শ্রুত ভাসিয়ে নেবে? এই যুদ্ধেরই বা শেষ কোথায়? সবশেষে একটা কথা বলতে চাই, পৃথিবীতে টিকে থাকার এই জীবন যুদ্ধে নৈতিকতা থেকে যেন সরে না যাই। অন্যের উপকার করতে না পারি কিন্তু ক্ষতি করা থেকেও যেন বিরত থাকি।

আরও পড়ুন:-

কপিরাইট © ২০১৮ রংতুলি চয়েস ইনফো